আপ শান্তিপুর লোকালে সদ্যোজাত শিশু কন্যা উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য

 মলয় দে; শান্তিপুর (নদিয়া) : ট্রেনে ভ্রমণের সময় অনেকেই অনেক কিছু ভুলে নেমে যান গন্তব্য স্থলে। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন সদ্যোজাত শিশুকে ফেলে গেছে কেউ? শুক্রবার সন্ধ্যায় ৪.৫৭ এর আপ শিয়ালদা শান্তিপুর লোকালের যাত্রীরা সাক্ষী থাকলো এমনি বিরল ঘটনার। শিয়ালদা উত্তর শাখার কালীনারায়নপুর জংশন স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই কে বা কারা সদ্যোজাত দেড় মাসের শিশুকন্যাটিকে ফেলে চলে যায়।কালীনারায়নপুর স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় কমতেই চোখে পড়ে সদ্যোজাত শিশুটি। ট্রেনের কামরায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। 

প্রশ্ন উঠছে কন্যা সন্তান বলেই কি ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দেওয়া হয়েছে? তবে আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন ভেবে শিশুটিকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেনি। ট্রেনের কামরায় কোলাহল শুনে এগিয়ে আসেন শান্তিপুর পাবনা কলোনির সুমিত্রা সরকার। তিনি কোলে তুলে নেন শিশুটিকে। পেশায় রেডিমেড জামা কাপড়ের ব্যবসায়ী সুমিত্রা কলকাতার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্যবসা করেন। প্রতিদিন সকাল ৭.৩০ এর লোকালে কলকাতা যান বাড়ি ফেরেন ৫.৫০ এর আপ গ্যালোপিন শান্তিপুর লোকালে। শুক্রবার একটি ট্রেন আগেই বাড়ি ফিরছিলেন সুমিত্রা দেবী। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান সুমিত্রা দেবী প্রথমে এগিয়ে এসে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। এরপর শান্তিপুরে ট্রেন ঢুকতেই এক সহযাত্রী কে সঙ্গে নিয়ে সোজা আরপিএফের কাছে যান তিনি। সেখান থেকে চাইল্ড লাইনে ফোন করা হয়। এরপর শিশুটিকে নিয়ে শান্তিপুর জেনারেল হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকায় শিশুটিকে চাইল্ড লাইনের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

আইনি জটিলতার কথা না ভেবেই মাতৃস্নেহে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন সুমিত্রা সরকার। তিনি জানান,‌ 'কাজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় কালীনারায়নপুর স্টেশনে কেউ বাচ্চাটিকে ফেলে রেখে নেমে যায় এরপর কামরার মধ্যে হইচই হচ্ছিল আমি গিয়ে দেখি একটি বাচ্চা শিশু পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিই। নিজে এক কন্যা ও পুত্রের জননী তাই কোনো কিছু না ভেবেই শিশুটিকে প্রাণে বাঁচাতে একজন মা হিসেবে কোলে তুলে নিই। এরপর এক জন মহিলা যাত্রী আমাকে সহযোগিতা করেন এবং শান্তিপুর ষ্টেশনে নেমে জিআরপির কাছে যায়, তারপর তারা শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।'

রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, পরিতক্ত সদ্যোজাত শিশুদের সঙ্গে দু'একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ কিছু ফল ও জামাকাপড় ও একটি ফোন নম্বর পাওয়া যায়। তবে ওই ফোনে কিছুক্ষন চেষ্টা করা হলে ফোন নাম্বারটি সীমানার বাইরে আছে বলে জানা যায়। এখনো পর্যন্ত বাচ্চাটির পরিবারের কোনো ঠিকানা ও খোঁজ পাওয়া যায়নি। আপাতত শুধু সদ্যজাত শিশুটিকে রাখা হয়েছে রানাঘাটের চাইল্ড লাইনের শিশুদের সরকারি আবাসে। 

এই ঘটনা জানাজানি হতেই বেশ কয়েকজন স্থানীয় নিঃসন্তান দম্পতি বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে আবেদন জানান। বিষয়টি তদন্তের পর আইনি প্রক্রিয়ার কথা বলা হয় রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। এই ধরনের ঘটনায় হতবাক অনেকেই।

No comments:

Post a Comment