উপাচার্যের গ্রেপ্তারিতে প্রশাসনিক অচলাবস্থা উত্তরবঙ্গ এবং দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয়ে

 

শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় 

নিজস্ব সংবাদদাতা; ( শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং ) ঃ 

উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যের গ্রেপ্তারিতে প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গ এবং দার্জিলিং (Darjeeling) হিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আটচল্লিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কার্যত কোনও হেলদোল নেই রাজ্য সরকারের। মঙ্গলবার স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠক। এবার স্থগিত করা হল নিয়োগ প্রক্রিয়া। বুধবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে জলপাইগুড়ি ক্যাম্পাসের অতিথি অধ্যাপক নিয়োগের প্রক্রিয়া আটকে দেওয়া হয়েছে।

সুবীরেশ ভট্টাচার্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, নতুন করে কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু বুধবারও রাজ্য সরকার বা শিক্ষা দপ্তরের তরফে কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। ফলে জটিলতা তৈরি হয়েছে বেশ কিছু বিষয়ে এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে এদিন শিক্ষামন্ত্রীকে ফোন করা হলেও তোলেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।

Advertisement

প্রসঙ্গত গত সোমবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন উত্তরবঙ্গ ও দার্জিলিং হিলস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য SSC বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁকে সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন,  অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এমনিতেই বছরের পর বছর ধরে গোঁজামিল দিয়ে চলছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্ম। তার উপর উপাচার্যের গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই দেখা মিলছে না গুরুত্বপূর্ণ তিন আধিকারিকের। বুধবারও ক্যাম্পাসে ছিলেন না ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রণব ঘোষ, পরীক্ষা নিয়ামক দেবাশিস দত্ত এবং ভারপ্রাপ্ত অর্থ আধিকারিক সুখেন সাহা। সংকটময় পরিস্থিতিতে কোনওরকমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম চালাচ্ছেন জযে্ট রেজিস্ট্রার স্বপনকুমার রক্ষিত। দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা করে একজন কর্মীও আজ পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়নি। কাগজে-কলমে পাহাড়ের বিশ্ববিদ্যালয় চালান উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরাই। ফলে সেখানকার অবস্থাও একইরকম। অচলাবস্থা কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলেই জানিয়েছেন জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা।

এই পরিস্থিতিতে দৈনিক কাজকর্মের বাইরে নিজেদের দায়িত্বে গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য আধিকারিকরা।  ফলে একের পর এক কাজ থমকে যাচ্ছে। জলপাইগুড়ি ক্যাম্পাসে বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল ও সংস্কৃত- এই চার বিষয়ে অতিথি অধ্যাপক নিয়োগের জন্য আগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুসারে ২২, ২৬, ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্টারভিউ হওয়ার কথা ছিল। জয়েন্ট রেজিস্ট্রার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে ইন্টারভিউ স্থগিত করা হল। কবে ইন্টারভিউ হবে তা অবশ্য বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। যদিও ওই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনও কথা বলতে চাননি স্বপন।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, দূরশিক্ষা বিভাগ নিয়ে একাধিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। অস্থায়ী শিক্ষাকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াও মাঝপথে ঝুলে রয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। এইসব সমস্যা মেটাতে কর্মসমিতির বৈঠক অত্যন্ত জরুরি ছিল। শুক্রবার সমিতির বৈঠকে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। উপাচার্য গ্রেপ্তারের জেরে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় সমস্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

২৫ অগাস্ট থেকেই ক্যাম্পাস উপাচার্যহীন। স্নাতক স্তরের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এইসময় বিভিন্ন বিভাগে আসন সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে উপাচার্যের অনুমোদন জরুরি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একই সমস্যা তৈরি হয়েছে দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয়েও।

আইন বলছে, আটচল্লিশ ঘণ্টার বেশি সময় বিচারবিভাগীয় হেপাজতে থাকলে স্বাভাবিক নিয়মেই উপাচার্যকে সাসপেন্ড করতে হয়। সেই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশও এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি। উপাচার্যকে সরকারি নিয়মে পদ থেকে অপসারণ না করলে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করাও যাবে না। কেন দ্রুততার সঙ্গে রাজ্য সরকার সেইসব কাজ না করে আটকে রাখছে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সমস্যা মেটাবে কে? এর উত্তর মিলছে না। মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তিনি পদক্ষেপ করবেন।

ad.


এদিকে, অচলাবস্থা কাটাতে দ্রুত কাউকে উপাচার্যের দায়িত্বভার দেওয়ার দাবিতে এদিনই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তনী সমিতি। সমিতির কর্তাদের দাবি, ক্যাম্পাসে সিবিআই হানার পরও পদক্ষেপ চেয়ে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে কোনও কাজ হয়নি। সংগঠনের সম্পাদক তাপসকুমার চট্টোপাধ্যায়ে বক্তব্য, ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের করুণ পরিস্থিতি হয়েছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। দ্রুত উপাচার্যের চেয়ারে উপযুক্ত কাউকে বসানো না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। আমরা চাই শিক্ষা দপ্তর গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিতে পদক্ষেপ করুক।

ad.

শ্চিমবঙ্গের কোনও উপাচার্যের গ্রেফতার হওয়ার দৃষ্টান্ত নজীর বিহীন, উল্লেখ্য এর আগে পশ্চিমবঙ্গে  কখনো কোন উপাচার্যের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। সুবীরেশের গ্রেফতারির পর নিন্দার ঝড় বইছে সব মহলে।

No comments:

Post a Comment